জয়পুরহাটে নিখোঁজের ৯ দিন পর তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় নিখোঁজের ৯ দিন পর তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা দুইটার দিকে সহলাপাড়া গ্রামের ভেতর বিলে কচুরিপানার নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছ পুলিশ। তবে তাঁদের পরিচয় জানানো হয়নি।
যদিও আলম হোসেন নামের এক প্রতিবেশী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছে শিশুটির পরিবার। আলম হোসেনকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটকও করেছে বলে তাঁরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। বাকি দুজনের নাম বলতে পারেননি তাঁরা।
নিহত শিশুটির নাম কাফি খন্দকার (৮)। সে সহলাপাড়া গ্রামের সঞ্চয় খন্দকার ও উম্মে কুলসুম দম্পতির একমাত্র ছেলে। সে নশিপুর দৌলতগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পুলিশের ধারণা, শিশুটিকে তিন-চার দিন আগে হত্যা করা হয়েছে। লাশটি গুম করতে বিলের কচুরিপানার ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। কারা কী কারণে শিশুটিকে হত্যা করেছে, তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিহত শিশুর স্বজন ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৮ এপ্রিল বিকেলে কাফি বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে রাতে আর বাড়িতে ফেরেনি। পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাননি। এ ঘটনায় পরদিন ১৯ এপ্রিল কাফির বাবা সঞ্চয় খন্দকার ক্ষেতলাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পাশাপাশি র্যাব ও ডিবি পুলিশকেও ঘটনাটি জানান। পুলিশ ও র্যাব একটি দল একটি চিরকুটের সূত্র ধরে নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। আজ দুপুরে গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী হাবিবা খাতুন বাড়ির পাশে খড়ের পালায় খড় নিতে গিয়ে দুর্গন্ধ অনুভব করেন। তিনি বাড়ির পাশের বিলের ভেতর কচুরিপানার কাছে গিয়ে একটি শিশুর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পেয়ে গ্রামের লোকজনকে খবর দেন। নিখোঁজ কাফির মা-বাবা এসে লাশটি তাঁদের সন্তানের লাশ বলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ বেলা আড়াইটার দিকে বিলের কচুরিপানা থেকে কাফির অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
সহলাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শিশু কাফির লাশ উদ্ধারের খবরে বাড়িতে লোকজন ভিড় করেছেন। বাড়ির পাশে একটি পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে শিশুটির মা উম্মে কুলসুম, কিছু দূরে বাবা সঞ্চয় খন্দকার বিলাপ করছিলেন। তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলেকে আমাদের গ্রামের আলম হোসেন হত্যা করেছে। কী কারণে আমার অবুঝ সন্তানকে হত্যা করল, তা জানি না। আমি আলম হোসেনকে টাকাও দিতে চেয়েছি। এরপরও আমার অবুঝ সন্তানকে মারল।’ সঞ্চয় খন্দকার আরও বলেন, ‘আমি যখন ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করছিলাম, তখন আলম আমাকে বলেছিল, ছেলেকে খুঁজে লাভ নেই। যেটা আছে (মেয়ে), তাকে নিয়ে থাক। বেশি করলে তোর নিজেরও খোঁজ থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর পর আলমের সঙ্গে আমার দূরত্ব শুরু হয়। আলমই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।’
নিহত শিশু কাফির ফুফু শ্যামলী বেগম বলেন, ‘আমার ভাতিজা কাফিকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, তা জানি না। কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ ছিল। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করছি।’
অভিযুক্ত আলম হোসেনকে তাঁর বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপেন্দ্রনাথ সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ দিন আগে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছিল। আজ দুপুরে গ্রামের হাবিবা খাতুন নামের এক গৃহবধূ খড়ের পালা থেকে খড় আনতে গিয়ে লাশটি দেখতে পেয়েছেন। শিশুটিকে তিন-চার দিন আগে হত্যার পর লাশ গুম করতে বিলের কচুরিপানার ভেতরে রেখেছিল। আমরা সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করেছি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে তাঁদের পরিচয় জানাতে পারছি না।’